খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ব্যাহত করেছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পটভূমি
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের সঠিক কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা যায়, ছাত্র সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ বিরোধ, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ এই ধরনের সংঘর্ষের মূল কারণ হতে পারে।
পূর্ববর্তী সহিংসতার ঘটনা
কুয়েটে ছাত্রদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো: আব্দুল হাফিজ মিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে ২১ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারের পেছনে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ছিল। বিশেষ করে, কিছু শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। citeturn0search2
এর আগে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুয়েট প্রশাসন ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের এক ছাত্রকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাসহ ১৩ জন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং সনদপত্র বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নেওয়া হয়, যেখানে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ সভাপতিত্ব করেন। citeturn0search0
প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহিংসতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের পরেও সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হওয়া প্রশাসনের কার্যকারিতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
শিক্ষার পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানার্জন ও গবেষণার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু কুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করছে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে, যা ভবিষ্যতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সমাধানের পথ
সহিংসতা ও সংঘর্ষের এই চক্র থেকে বের হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মানবোধ জাগ্রত করা, এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রশাসনের উচিত হবে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করা যায়।
সর্বোপরি, কুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই ধরনের সহিংসতা পরিহার করে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কার্যক্রমে মনোযোগ দেওয়া উচিত।